পুকুর
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
সেই পুকুরটা। তার পাড় আছে জল নেই।
চারটে পাড় উঁচু করে বাঁধানো হয় প্রধানের করুণায়
সেইসাথে তাবৎ সম্পর্কের সুখগুলো পাড়ের তলায়
তাদের বিরল কান্না ভেসে ওঠে না ভূমির ওপরে
আত্মজকে বড়ো হওয়ার জন্যে দূরদেশে ছাড়া হয়
পাখিরা মায়েরা যেমন উড়াল শেখায় ছানাদের
কতটা দৌড়োলে, কতটা ঝুললে বড়ো হবে সন্তান
আকাশের নক্ষত্রেরা জানে না। জানে কমপ্লান।
ঝড়ো বাতাসের তাড়িত মোষের সঙ্গে
অবিরল বৃষ্টির মাখামাখি থাকলে
মনে হয় এবার পুকুর ভরে যাবে জলে
মীনশরীরে উথাল-পাতাল হবে আমার কমপ্লান বয়
আমার অন্ধকার খুপরিএ ভেতর শ্রাবণের জ্যোৎস্না
উঁকি দেয়। বুকের ওপর নক্শি কাঁথা তুলে দিয়ে
আমি তার ওম নিই। অনুভব করি মায়ের হাত
আসন্ন স্বপ্নেরা দল বাঁধে, ঢুকে যায় আমার ঘরে
আমি শুনি কিছু শব্দহীন দৈব-উচ্চারণ
আর এদিকে জলহীন পুকুরটা ভেসে যায় জলস্রোতে
কেন ডোবে পাড়, কেন ডোবে।
পাখি
আশোকানন্দ রায়বর্দ্ধন
শান্ত কুপির আলোয় জেগে ওঠে মায়াচিত্র—
এতসব কোঠাঘর। এতগুলো দরজা।
ঘরে জানলা নেই। দরজা হাট খোলা।
কোনও আই-হোলও নেই। কারেন্সি শাস্ত্রের
উদারকথা যে পাউচে ঢোকানো—
তার অর্ধেকটা হাওয়ায় ভরপুর।
হাওয়া শোবার ঘর থেকে হেশেঁল
শ্রমণহাসিতে আসে আর যায়।
অরণ্যমুণ্ডনের পর সূর্যাস্তের মানুষখেকো আঁধারে
এক লক্ষ্মীছাড়া পাখি মণিকোঠায় ঝাঁপ দেয়।
পাখিটা জন্মান্ধ। তবুও ওড়ে আকাশ-জমিন
পাখিটা বোবা। জাগরণী গায় নিদ্রাহীন
সর্বনাশা পাখি শেকলের দাস নয়। পলায়নপটু।
অফুরান স্যাঁতস্যাঁতে বিষাদ রেখে পাখি ফিরে গেলে
ভাবি, পাখির কী রং ছিল। কী রং ছিল পাখিটার
লাল হলুদ না নীল
হলুদ নীল না লাল
নীল লাল না হলুদ
এই লেখাটা শেয়ার করুন