তীরন্দাজ
অভিজিৎ চক্রবর্তী
নেমে যাই সঘোষে অঘোষে
তদ্ধিতে আর কৃতে, সমাস
সন্ধি ঘেঁটে মুক্ত করি রুদ্ধ
উপমা, যদি গোলাপ ফোটে;
অন্ধকূপে উৎসারিত জল
সূর্য আর চাঁদে নিপাতনে
সিদ্ধ করি, রঙ করি; ধুলো
রেণু হয়, তবু যদি খাদ
থাকে মিশে, যদি জল আর
আগুনে হয়না বন্ধুতা, তবু
যদি রন্ধ্র অসমাপিকায়
যায় দেখা, তখন এ হাড়
মজ্জা, তামা ও লোহার ভার
দধীচির মত পারি দিতে;
হলে বজ্র হানির আঘাত
মূলে, যেন জন্ম কেঁপে ওঠে
যেন তোর মৃত্যু কেঁপে ওঠে
বাচাল
অভিজিৎ চক্রবর্তী
তোমার কথার উল্টো মানে করব বলেই জন্ম
ফোটাব সজিনা ফুল খোঁপায়, ভালো যে বাসো তার জন্য
কথার পাঁকে ফাঁকে ঘটনায় অঘটনে খালেবিলে
এ আমার জন্মগত অধিকার, শূন্য হাতিয়ার-
খালি হাতে বিরোধীতা, নেমেছে জোয়ারে যত,
এরপর যদি না হয় কিছু, মানোনা কিছুই, জেনো
উল্টোখাতে বয়ে গেছি শুরু থেকে এখনো
স্রোতের টানও ছিল সব দিকেই মোড়ানো
এ এমন এক খেলা, মাঝেমাঝে ভুল চাল
মাঝেমাঝেই মারপ্যাঁচ, তোমার কথার মানে
বদলে গেছে কখনো, অজস্রবার ধাক্কা খেয়ে যদিবা
দেখি, না আমি- আমার, ছিন্ন পাল নড়ে
তুমি ভাবো দল, ভাবো কথার পাকের শক্ত
বাঁধন – পাথর লেগে আছে,
থাকবেই, যেহেতু কোলাহল দিনদিন বেড়ে যায়—
যেহেতু কথার জাল ছাড়া কিছু নয় – সেইজন্য
সব কিছুরই উল্টো মানে হয়, হয়ে যায়
চুলা
অভিজিৎ চক্রবর্তী
খুঁচিয়ে তুলছি সব বীতরাজ ক্ষোভ
হ্যাঁচোড় প্যাঁচোড় নিদ্রা, ঘনলোম-বুক
দেখে ভালোবেসেছ তা এখন লোমের
নামে দিলাম হৃদয়, অকালপক্ক ব্যাটা
ছেলে দেখো সিটি মারে – হাতখরচ যা
সব কেটে রেখে দেবো, জানোনা আমায়
অনেক দিনের রোজ, পকেট কাটার
লোভ সামলে তবে তো দাঁড়াবে, বাজারে
যাবে, বাজারে আমার খুচরো বিনিয়োগ
কথায় ঝাল আছেই, আধুলিতে কিনি
দিনান্তের সূর্য, ঢলে পড়ে পশ্চিমের
ভিটায় – যেন কত না স্বাভাবিক, ঘুম
আসেনা দুপুরে, মাথা চড়ে, তা প্রেমের
বারোটা বেজেই যায় – পথে পথে হ্যাঁচকি
তুলে ফিরি, কুটকুট কাটে ইঁদুর – আঃ
দিগন্তের হাসি, ঠোঁটে তার আঁচ বাদামী থেকেই যায়
ভালোবাসো গাছ
অভিজিৎ চক্রবর্তী
গাছকে কাতুকুতু দিলে গাছ হেসে ওঠে জানো!
গাছে হাত দিতে গেলে ভাবো কোথায় দেবে!
তোমার শরীরে যেমন সবখানে হাত দেয়া যায়না
হাত দিতে দাওনা – অধিকারে ঢেকে রাখো কোন কোন স্থান
গাছেরও আছে তেমন গোপন – আছে নাভি, আছে স্তন
আছে বগলের তলা, ঊরু – হাত দিলে গাছ লজ্জা পায়
অস্বস্তি হয়; এখন না বুঝে হাত দিলে
গাছ তো রাগ করবেই –
রাগ করে দুটো চড় কষালে সে কি ভুল হবে?
অপরাধ হবে? হবেনা তো!
কেউ কেউ গাছের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাত কাটায়
তুমি তাকে সহবাস নাম দিতে পারো
কেউ কেউ গাছকে চুমো খায়
গান শোনায় – গান শুনে শুনে গাছ গর্ভবতী হয়,
ভালোবেসে হাত বাড়ায় – দেখো গাছ কেমন
খুশি হয়ে ওঠে, তোমায় জড়িয়ে রাখে
কথার ভাঁজে
অভিজিৎ চক্রবর্তী
সব কথার প্রান্তরে মুখ থাকবে এমন নয়
সব লেখারই দু’দিকে যে খোলা ডানা ভেবোনা
কিছু কথা যার একপ্রান্ত ঘরে
অন্যপ্রান্তে পাখি ওড়ে
কিছু কথা যার দিকে যত বাড়াও – অধরা
কোন ঘুম যেন একা বৃষ্টি ভিজে
কোন রাত পচা ভাতের মতন –
সব প্রেমেই অচেনা গন্ধ থাকে, আর নুন
সব মানুষেরই ঘ্রাণে গোপনতা আছে
ঠোঁটের ওপর মধু কারো একটু লেগেই থাকে –
কোনও কোনও মুখ অন্ধকারেই মানায়
কোনও দিন যা ঘোলা আলোয় নাচে
সব কথারই অপর পৃষ্ঠা আছে, আছে ছুরি-জিভ ফলা
সব কথারই গোপনে জানালা আধখোলা—
ভেতরে মেয়েটি হাসে – বিবাহ মানেনা যেই
একটুখানি আকাশের মোহ সব মানুষেরই
থাকে, বাঁচিয়ে রাখেই লোকে—
সব দিনের ভাঁজেই সেই মেয়েটি ঘুমায়
বাবু খুঁজে খুঁজে রাতে যে গলি-মুখে দাঁড়ায়
গানের ছলে
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আমার গানের ভাঁজে বন্দুক রাখা আছে
রোজ তেল দিই, মুছে রাখি
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জং পরিষ্কার করি
রোদের দিকেতে তাক করে
দেখি ফুটো দেখা যায় কিনা
বন্ধুকে মরিচা হলে গান ভালো জমবে না
মরিচা পড়তে দিইনা
বেশি কথা হলে ট্রিগার চাপতে ইচ্ছে হয়
মাথা ঝমঝম করে, শিখা জ্বলে ওঠে, যেন
রেল পেরোয় পুরোনো ব্রিজ
বেশি নীরবতা এলে
মৃত্যু শীতলতা ঘিরে ধরে
ধূ ধূ শব্দ যেন আনাড়ি নির্বীজ
সুতোর ওপর দিয়ে হাঁটা
রাগ ওঠে, রাগের অনুশীলন করি
কেঁপে যায় রেখা শীতে
কাঁপন অনুশীলন করি
এখন গানের ছলে হাসতে হাসতে
বন্ধুকই তুলে ধরি
লোকেরা গরম টের পায়
ফ্যাকাশে সাদা – স্বাভাবিকই লাগে
বন্ধুক তাক করলে গানই বেরোয়
চাপ চাপ ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ে
পাহারা
অভিজিৎ চক্রবর্তী
তোকে সারাদিন কুত্তা-খোঁজা খুঁজেছি
অবসন্ন দীর্ঘ লতারোদ
মড়মড় করে ভাঙে ঘরদোর
ঝাঁপিয়ে পড়া গত জন্মের ক্রোধ
রক্তের ঘ্রাণ যদিও পেয়েছি হাড়ে
শেষবার রিডে চাপ দিলে বাজে সা
এই ছিল তার শখের পায়রা পোষা
পায়রা এবার মৃত্যুর গান গা
ছিন্ন করোটি হাতে নিলাম দ্যাখ
খুলিভরে তোকে ফিরিয়ে দিলাম গান
খুলিভরে তোকে ফিরিয়ে দিলাম হাসি
কুত্তা আজ স্বর্গ ভুলে আসে
গানের শস্ত্র শুঁকে পায় ঘাসে ঘাসে
এখন তুই মৃত্যুর নামে বাজি
গত জনমের ফেলে যাওয়া সব দাবি
খুঁজে খুঁজে আজ রোদেই ফিরে গেছি
নিজের লাজ নিজেই আগলে রাখি
এই লেখাটা শেয়ার করুন