মহুয়া দত্ত । মহাদেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের তরুণী শিক্ষিকা । স্টেশন থেকে স্কুল বেশ খানিকটা দূরে । তাই প্রতিদিন রিক্সায় চেপে স্কুলে আসতে হয় তাকে। আর তাকে স্কুলে নিয়ে আসা আর স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার মাসিক বরাত পেয়েছে মাধব হালদার । তরুণ রিক্সা চালক । কিভাবে ঘটে গেল মাধব এখনও ভাবে ।
মাধব সম্পর্কে মহুয়া কি ভাবে জানা যায়নি আজও । কিন্তু দিনের পর দিন তাকে টানতে টানতে মাধবের মনে অবাধ্য স্বপ্ন বাসা বেঁধেছে । মাধব এও বোঝে তার মত প্রায় নিরক্ষর ও গরীব মানুষ মহুয়ার প্রেম পেতে পারে না, । তবে অপেক্ষা ক'রতে ক্ষতি কি । অনেকসময় মাধব মহুয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে । চোখের ভাষা বুঝতে চায় । কিন্তু কিছুই বোঝা গেল না আজও । তবে মহুয়া মাধবকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কোনোদিন করেনি । চলতে চলতে নানা রকমের কথা হয় দুজনের মধ্যে । মাধবের বাড়ির খবর নেয় আগ্রহের সঙ্গে । মাধব খুব খুশী হয় তাতে । এই বা কম কি । নিশ্চয়য় আচমকা একদিন বসন্ত বাতাস ঢুকে যাবে মহুয়ার মনে ।
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় । তিন-তিনটে বছর পার । মহুয়া এখনও অবিবাহিতা । মাধবও বিয়ে-থা করেনি এখনও । তবে কি মহুয়া তার জন্য হৃদয়ে আসন পেতেছে ? হলেও হতে পারে । মাধবের বুকে নিটোল বিশ্বাস । কিন্তু আজও তো কিছু বোঝা গেল না । তাহলে কী হবে ? কোনোদিন হয়তো শুনবে মহুয়া দিদিমণির বিয়ে হয়ে গেছে । রিক্সাও বদলে নিয়েছে । সইবে তার ? সইবে ?
কয়েকদিন মহুয়ার দেখা নেই । খুব দুশ্চিন্তায় মাধব । কীভাবে তার খবর নেবে ? যার জন্য তার এত ভাবনা, তার ফোন নাম্বারটাও তার কাছে নেই । মাধব লজ্জায় চায়নি, । আর মহুয়াও সে কথা ভাবেনি । কিন্তু খোঁজ নেওয়া দরকার । আর যে ভাল লাগে না তার ।
শেষমেশ দুঃসংবাদ । ওই স্কুলের কেরানী সুশীল দে কাল মাধবকে জানিয়েছে মহুয়ার পাঁচ দিন আগে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে । অবাক মাধব । এ কখনো হ'তে পারে ? কেন এমন হ'ল ? কী হয়েছিলো তার ? কোন ব্যথা ছিল বুঝি বুকের গভীরে ? আর ভাবতে পারে না মাধব । হাউহাউ ক'রে কাঁদতে থাকে সুশীল দে'র সামনে । খুব অবাক হ'য় সুশীল ।
তারপর মাধবের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনার সুরে বলল,''জানি তো রে । তুই ওকে কতদিন ধ'রে নিয়ে এসেছিস । নিয়ে গেছিস । একটা মায়া তো হবেই । আমরাও খুব কষ্ট পেয়েছি ।''
হায়, সুশীল দে কী বুঝবে তুমি মাধবের অন্তরের দুর্জ্ঞেয় জগতের কথা। তোমরা দুঃখ পেয়েছ, আবার বেতন আর কাজের মাঝে হারিয়ে যাবে। কিন্তু মাধব প্রতিদিন কাঁদবে। সামনে নয়,নিভৃতে । খুঁজে দেখো তো সে জগৎ । খুঁজে পাবেই না ।
রিক্সাটা আর পথে চলে না। বাড়িতে রেখে দিয়েছে মাধব । জানি না কেন । পরজন্মে তার কি বিশ্বাস আছে ?
HOME
এই লেখাটা শেয়ার করুন