কবিতা

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন হেমন্ত সংখ্যা নভেম্বর ২০১৬ ইং 


[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

অভিনয়

সন্তোষ রায়


একটি দিন থেকে বেরিয়ে এলাম যখন

চারপাশে করতালি

চেঁচিয়ে বলছে সবাই --- দারুণ অভিনয় 

                             দারুণ অভিনয়।

হাসবো, না কাঁদবো ভেবে পেলাম না

সুয্যি তখন আলোকসম্পাত শেষে নির্বাপিত।


অন্ধকারে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত যখন

তখনো বলছে সবাই --- দারুণ অভিনয়

                             দারুণ অভিনয়

আমার সন্তান যখন জন্ম নিচ্ছে মাতৃজঠর থেকে

তখনো বলছে ---         দারুণ অভিনয়


এখন খেতে গেলেও মনে হয় অভিনয়

ভালবাসলেও।

এমন কি মরে গেলেও মনে হয় মরিনি

আলো নিভলেই উঠে যাবো –



পক্ষপাতি নই

সন্তোষ রায়


সূর্য, চন্দ্র কোথায় জানি না

সাদাকাগজের পাশে অন্ধকার গলি

এখন গলির মুখে দাঁড়িয়ে

সত্য কথা বলার আগে

জীবনবীমা বাঞ্ছনীয়।


আমার বাবার নাম চন্দ্রনাথ

মা মহামায়া

দু-জনেই নির্ভয়-নির্ভয়া

আমিও বীমার পক্ষপাতি নই।



স্বল্প বেতনভোগী

সন্তোষ রায়


চলো পালা করে বাঁচি

তুমি তিনদিন, আমি তিনরাত্রি

যেমন একটিকে ভেঙেচুরে চা-খাই ক’জনে

যেমন পান্ডবেরা বিয়ে করে এক দ্রৌপদী


চলো পালা করে বাঁচি

তুমি তিনদিন, আমি তিনরাত্রি

যেমন একটি বেতন ভেঙে চার চাকুরি 

নিরঙ্কুশ না হলে যেমন ছ’মাস-ছ’মাস মুখ্যমন্ত্রী

যেমন একটি সিগারেট খাই বন্ধু দু’জনে

সুখটান দিয়ে বলি, চলো পালা করে বাঁচি

তিনদিন বাঁচি আমি, মৃত তুমি তিনরাত্রি

তিনদিন বাঁচো তুমি, মৃত আমি তিনরাত্রি

স্বল্প বেতনভোগী – 



নেই-আছে

সন্তোষ রায়


পাহাড়ে শিব থাকতেন একদা,

এখন নেই। গত হয়েছেন।

তাঁর নাতি-নাতনিদের নাম এখন –

রবার্ট, ফ্লোরিডা, বেঞ্জামিন…

দাদুর গায়ের চামসে গন্ধের সাথে

                কিছু মিল আছে


শিবের সংসারে বটবৃক্ষ ছিল

নেশা-ভাঙ হ’ত।

এখন পরিত্যক্ত— জবাফুল পড়ে না পায়ে


শিব নেই

পাহাড়ে গাঁজা চাষ আছে—



তারা

সন্তোষ রায়


গাছ দেখি। তোমাকে দেখি না।

টঙ দেখি। তোমাকে দেখি না।

রিয়া দেখি। তোমাকে দেখি না।

বুকে বাঁধা চাঁদ দেখি

তোমাকে দেখি না।


সমস্ত খোঁজের শেষে

চোখ বুজে তোমাকেই দেখি

          তোমাকেই দেখি



সংশয়

সন্তোষ রায়


ওই লৌহমানবটি নিদ্রায় কোমল হ’য়ে আছে

টিপে দেখো আত্মবিশ্বাস তুলতুলে

সচেতনতা নেই


তুমি তার নিদ্রার ভেতর দিয়ে যাও

স্বপ্নের কাছাকাছি গিয়ে বলো—

‘উই আর ইন দ্য সেইম বোট ব্রাদার’


দেখো চক্ষু খুলে কিনা

পাল তুলে কিনা

না-কি ডুবে আছে সুধাসাগরে!



সন্ধিবিচ্ছেদ

সন্তোষ রায়


সেফ্‌টিপিনের খোলা মুখে পা পড়লে

         তোমার কথাই মনে পড়ে।

তখন, শ্রেণীর বেঞ্চে আমরা সন্ধিবদ্ধ হয়েই বসতাম।

এখন নিজেই পড়াই, দেখি দু’টি সারির

মাঝে আগের মতোই আছে চলার পথ।

হাঁটি। সূত্র আওড়াই।

কেউ সন্ধিবদ্ধ হ’তে চাইলে, মাঝখানে

                                    দাঁড়াই,

বলি, বিচ্ছেদ করো পূর্ব-পর পদে। 



পরিযায়ী

সন্তোষ রায়


চাকুরি ফুরোলেই ওরা চলে যায় কেন ডানা ঝেড়ে?

বুঝি বসন্ত শেষ

বুঝিবা শ্বাসকষ্ট বাড়ে

বুঝি কথা বলা বারণ

বুঝিবা ঋতুসব এম.এল.এ. হয়ে গেছে!

বুঝি দিনগুলি পাড়ার বখাটে-ছেলেদের সাথে মিশে গেছে

শিস দ্যায়

চোখ মারে

নাম ধরে ডাকে!

না হলে চাকুরি শেষ হলে ওরা চলে যায় কেন

                              কালাঝাড়ি

                              নীরমহল ছেড়ে?


এই লেখাটা শেয়ার করুন