সাইবার সংগীত
নকুল রায়
১
কণ্ঠে তোমার পরস্বর,
যে-গান ভেসে আসে
সে তোমার ক্ষতবেদনা।
আজ যন্ত্রের মন্ত্রে বিবাহ
তোমাকে পাই না আর।
২
সারল্যে মূর্খতা ভালো
তবু সে অসহ্য নয়;
ভুল বানানে চিঠি আসতো
তবু অপেক্ষা উপেক্ষা ছিল না।
আজ কিন্তু বুদ্ধি করে
ফেসবুকে আমাকে ঠকালে।
৩
তোমার সিঁড়ির শুরু
আমার বুক থেকে।
তোমার দৃষ্টি নিবদ্ধ
আমাকে চাওয়ার মধ্যে।
পথ পথের খোঁজ দেয়,
আমি তোমার সঙ্গেই আছি।
কতটুকু উঠলে
সিঁড়ি গুণতে থাকো।
৪
কখনও অন্য মানুষ
নিজের হয় অনুভবে।
কখনও নিজের মনের মানুষ
অন্য মানুষের ছদ্মবেশে
ঢুকে পড়ে।
অনন্যতা এত সোজা নয়।
৫
অপমানের ভাষাতেও
অনুবাদ আপেক্ষিক।
সন্তান আমাদের শরীরের
তবু যেন মনে হয়
তাদের স্বার্থে
আমরা প্রাচীন।
৬
মাটির অধিকার সর্বজনীন,
আকাশের মতোই স্বাধীন।
পাখির ডানারও
যন্ত্রণা আছে, তাদের
বুকের ভাষায়ও ওম্ জাগে
শাবকের আশায়।
মাটি মানুষ পাখির অধিকার
আকাশের নিচে একই
৭
বহুদিনের পুরানো বাতাস
তবু কেন প্রতি বসন্তে
তোমাকে মনে পড়ে।
পথে কৃষ্ণচূড়া মাড়িয়ে
গেছে কত মিলিটারি ট্রাক
তোমার শতশুদ্ধ প্রার্থনায়ও
বিপ্লব আসেনি সত্তরের দশকে।
শবের মিছিলেও তুমি একা
আমাকে ভালোবেসে গেলে।
৮
মেঘের ভেতরে ফেসবুক ?
ফেলে এসেছি—
ভয় নেই, বৃষ্টির সুতো
বেয়ে মেঘের মেয়েকে
ঠিক বান্ধবীর মতো
নিয়ে নেমে আসবে তুমি।
৯
পাতালের কথা জানি না,
তবে পায়ের তালে তালে
পা চালিয়ে না-গেলে
এই দুর্যোগের রাতে
বাড়ি ফিরতে পারবো না।
আশ্চর্য !
পথে এক বাড়ি-হারানো
মাতালের সঙ্গে দেখা।
১০
গান এত শস্তা নয়;
মানুষ আসুক দলে-দলে
তখনই সাইবার সং
পল রোবসন জেগে
উঠলেই—
পুনর্বার সাইবার সং
সেম্ বোট ব্রাদার।
১১
শুধু পৃথিবীর নয়, মানুষের
অন্তরেও অন্তঃসলিলা নদী
বয়, দাঁড় টানে ইচ্ছাশক্তি
আজীবন।
মাঝে মাঝে প্রেমাসক্ত সাঁকো
ধরে পারাপার করি
গৃহস্থ-জীবন।
১২
অক্ষর পড়ে আছে দেখো
দুর্দিনে বেদনা জাগাতে;
সুখী অক্ষরগুলি মাঝে মাঝে
অলস ভঙ্গিতে কৃপা করে দেখে;
তাদেরই সুদিনে বেদনাময়
অক্ষরগুলি তখনও নির্ভীক
জ্বলে উঠতে জানে।
১৩
নিজের সঙ্গে কথা না-বলে
সঙ্গী বাছাই করা কঠিন।
তোমাকে পাওয়া আরও জটিল।
তোমাকে পাওয়া আরও জটিল।
আমার সঙ্গে আমার ঝগড়া
চিরদিনের; স্বার্থকে তবু
পরার্থে জড়ালে—
সবচেয়ে ভালো হতো,
তা-ও সম্ভব নয় জানি
নিজের সঙ্গে কথা না-বলে।
১৪
জীবন তার নিজস্ব নিয়মে
ইন্টারনেটে চলে;
আমি জীবনের দাস, অথচ
জীবন মৃত্যুর।
ভালোবেসে হাত শক্ত করে
ধরে বাঁচা উচিত;
বাঁচার উজ্জ্বলতার সময়েও
ভালোবাসা বিক্রি অনুচিত।
১৫
যখন মর্যাদার চেয়ে ওজনে
ভারী হয় লুণ্ঠিত দ্রব্যের;
যখন সম্মানের নিচে বয়ে
যায় মানুষ কেনা-বেচা;
যখন শরীরের চেয়ে দীর্ঘ
হয় কৃতিহীন ছায়ালোক;
তখনই জেগে ওঠে দ্রোহিতা।
এই লেখাটা শেয়ার করুন