অনুগল্প

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০১৮ ইং

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

মেজাজ
রণজিৎ রায়  

দেবু তথা দেবপ্রসাদ সেনচৌধুরি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ছেলে। ত্রিপুরায় দিদির বাড়ি থেকে পড়াশোনা করে। উচ্চবর্ণ ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। ওর বাবার বাৎসরিক শ্রাদ্ধ এক সপ্তাহ পর। আমাকে সে নিয়ে যাবেই। ওর বাবা মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, 'আমার শ্রাদ্ধে না পারিস, বাৎসরিক শ্রাদ্ধে ওকে নিয়ে আসবি। নতুবা আমার আত্মা শান্তি পাবো না।'

পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা তখন পদ্মপাতার জলের মতো টালমাটাল। পাসপোর্ট ছাড়া ওর পক্ষে যাওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে অসম্ভব ও বিপজ্জনক। আগরতলা পাসপোর্ট সেকশনের বড়বাবুর রুক্ষ ধমক খেয়ে ফিরে এসে কেঁদে ফেলে সে। আমি ভরসা দিয়ে বললাম, 'কাল আমি তোমার সঙ্গে যাবো। দেখা যাবে কোথাকার জল কোথায় দাঁড়ায়। একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বো।'
আপাতত শান্ত হলেও নিশ্চিত যে এ বদমেজাজি মানুষটিকে কব্জা করা এতটা সহজ নয়। পরদিন যথারীতি ওর সাথে আমি গেলাম। দু'জনকে একসাথে দেখে আরও রেগে গেলেন বড়বাবু। মেজাজ ও উপহাসের সুরে বলেন, 'এবার বন্ধুকে নিয়ে এসে ভাবছো, আমি ভয়ে দিয়ে দেবো।'
দেবু ভয়ে কেঁপে কেঁপে কৈফিয়ত দেয়, 'আসলে পাসপোর্ট তো ওর নামেই। সে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে ব্যস্ত থাকে তাই......।'
বাধা দিয়ে তিনি ধমকে ওঠেন। সে তীব্র ভয়ে আমাকে ফিরে যাবার ইশারা করে। আমি তাঁর একদম মুখের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, 'আপনার কি পাকাশয়ের বেদনা আছে?'
আরও রেগে গিয়ে তিনি উত্তর দেন, 'তুমি কি রসিকতা করছো?'
আমি দৃঢ় স্বরে বললাম, 'আমি যোগাসন করি। রোগনিরাময়ের ব্যাপারটাও জানি। আমার পাসপোর্ট লাগবে না। আপনি নিজেকে সুস্থ করুন। এত মেজাজ আপনি ইচ্ছে করে করছেন না। ভেতরের বেদনায় অশান্তিতে মেজাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।'
হঠাৎ বড়বাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে কাতরভাবে বললেন, 'তুমি ঠিকেই বলেছো ভাই। আমাকে বাঁচাবার পথ দেখাও। এলোপ্যাথিতে কাজ হচ্ছে না। আগামীকালই তোমার পাসপোর্ট হয়ে যাবে।'
আমি বললাম, 'পাসপোর্ট কোনো ব্যাপারই নয়। আপনার জীবন অনেক বড়ো। আপনাকে বাঁচাতে পারলে বড়ই আনন্দ হবে।'
তিনি চিৎকার করে বলেন, 'তুমি বললে কে শুনছে? আগামীকাল তোমাকে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেবোই। তুমি আসতে না পারো, সে এসে নিয়ে যাবে। আজ তোমার সই রেখে দেবো।'
দেবু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। আমি বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে খেয়ে দেখি, ওর সামনে রাখা চা উষ্ণতা হারিয়ে জল হয়ে পড়ে আছে।
                                                                                                                                     HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন