বাঘ বেরুলো বনে
এক
পরিত্যক্ত জুমে এসো, টংঘরে করি রাত্রিবাস
উদগ্র নেশা আছে নিবিড় বনে
প্রিয় পাত্রে ঢেলে দেব নিঃশব্দের গান।
তারপর শিকারির দল অরণ্য ছেড়ে যাবে
বন্দুক ফেলে,
ফেলে যাওয়া বন্দুকের নলে
তুমি আর আমি দেখে যাব চাঁদ
ভালবাসার কলঙ্কসখী
এভাবেই দেখে সারারাত।
দুই
ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একটু ভাবো
নিভে যেন না যায় কামনার আলো
অরণ্য শান্ত বড়ো, তেমনি কোমল
চুলে কাটো বিলি, লুকাও অন্তরে।
মনে মনে ডাকছে যত ফুটন্ত ফুল
তার ঘ্রাণে তুমিও পাগল হলে
ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একটু ভাবো
হৃদয় না ভাঙে যেন অতীব প্রেমে।
বিনিময়
যদি জানতে চাও আমার মূল্য কত
নিঃশব্দে থাকব
যদি বল – এই হাতের দাম
নিঃশব্দ থাকব
এই চোখ, বুক, মাথা
কোনো শব্দ-ই করবো না
বাজার ঘুরে বারবার ফিরে ফিরে আসবে জানি,
পসারে সাজানো শরীরটা দেখবে স্বপ্নের মতন।
আমার নিঃশব্দতা তোমাকে
বিরক্ত করবে
বিরক্ত করবে
আর বিরক্ত করবে
গল্পটা ডেকে ডেকে বলবে মানুষকে
ওরা শুনবে, মুচকি হেসে চলে যাবে
মনে মনে বলবে – পাগল।
কে পাগল!
আমি পাগল হ’লেও কোনো শব্দ করবো না
কোনো মূল্যেই শব্দ করবো না
কোনো শব্দে নিজেকে বিকাবো না
হে পাঠক,
নিঃশব্দে দিয়েছি সব –
গ্যাপ
মাঝরাত সরে যায়
আরেকটু সরে
আরেকটু ...
আরেকটু ...
একটা গ্যাপ
চালা থেকে কুয়াশা পড়ে টুপটাপ
কী যন্ত্রণা!
টয়লেটে চলে যায় মন
এভাবেই গ্যাপ তৈরি হয় নিজের সাথে
মাঝরাতে ফিরেও তাকায় না
যেতেই থাকে বাড়ি থেকে নেমে
পথ পেরিয়ে
মাঠ পেরিয়ে
কুয়াশার সান্ত্বনা মেখে
আমার ঘুমন্ত দেহটি পড়ে থাকে একা এখানে
অনুকথন
এক
এমন কথা বলব না আর মুখে
ইহনদীর স্রোতধারা উপচে পড়ে বুকে।
দুই
নিঃশব্দে লিখে চলি যত রুদ্ধশ্বাস
দূষিত জলবায়ু আর অন্ধ মহাকাশ।
তিন
ডুবে আছি।
অন্ধকারে উড়ল পাখি
কে আমি!
-- ডানার ঝটপটানি
সামুদ্রিক
উনুনটা কাত হয়ে পড়ে আছে। ধোঁয়ায়-ধোঁয়ায় যেন সন্ধ্যা।
আমি কি পারি বসিয়ে দিতে ঠিক দুপুরে!
সমুদ্রের কত আনাচ-কানাচ, কত খাদ্যের বহর, মস্ত পরিবার।
ভাসতে-ডুবতে হয় সকলের মাঝে, ফেনাগুলো তেড়ে আসে পাহাড় বিক্রমে
কী আর কুড়োই বলো নিজেকে ছাড়া ?
আমি-ই আয়, আমি-ই ব্যয়, শূন্য জালে পড়ে জল হয়ে যাই—
এদিকে তাকালে ওই পাড় দেখা যায়।
উনুনটা কাত হয়ে গেছে কয়লা ফুরোবার আগেই। এক বালতি
আগুন গলে গলে পড়ছে জলে
তীরের মানুষ ডাকে দূরের মানুষকে
সন্ধ্যার হাঁস যেমন ডাকে গৃহিনী
দূরের নৌকো যেন চাঁদের কলা।
মনে মনে বলি – পারাপারহীন ডুবছি আমরা
জীবনের ভেতর সংসার এক তিমি।
SHARE THIS PAGE!