কবিতা

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন শরৎ পর্যায় অগাস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইং 

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

সুজিত রঞ্জন দাশের কবিতা

সকাল


অন্ধকার! অন্ধকার! গভীর অন্ধকার……

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে

পুড়িয়ে ফেলি ওসব পাণ্ডুলিপি

ভেঙে ফেলি কান্নার ছবি আঁকা তুলিকলম সব


ফুলগুলি ভাসিয়ে দিই

ভেসে যাক গে যেখানে খুশি

ঊষর বালিতটে মুছে যাক সতর্ক পায়ের চিহ্ন 


ফিরিয়ে নিই

ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া আশমানি রঙের মোহ,

নিরুপায় মৃত মুহূর্তের সশব্দ কান্নাগুলো

কারণ

দেবদারু ছায়ায় এখন গাঢ় অন্ধকার!

যারা সঙ্গে ছিলো দৃষ্টিসীমায় আঁকা

একান্ত আপন মুখ – ফিরে যায় অন্ধকারে

                       মুছে তসরিফ…


তবু, পদ্মপাতায় শঙ্খচূর্ণ বেআবরু কোলাজ

ফিরিয়ে আনে চোখ

তাকিয়ে দেখি বরজে সকাল, পাঁচিল টপকে সূর্যোদয়

এক মুঠো আলোর দেয়ালি খেলা পূবালি দিগন্ত 

আর, শাপান্ত শাঙনের সশব্দ অট্টহাসি!


প্রতিশ্রুতির মুখ তোলা আরক্ত প্রথম ফটক।

 


কবি, ভালবাসা ভিক্ষে চেয়োনা


বাজুক সময়ের ঘন্টা, বাজুক এলার্মের কাটা অব্দি

মস্তিষ্কের গোপন সার্কিটে এখন রক্ত মোক্ষণ

এলোমেলো বোধে লাগামহীন ইচ্ছা-অনিচ্ছা

দাও না, চলতে দাও না …… চলুক!

অথচ আন্তরিক জীবন থেকে একটা সোচ্চার প্রতিবন্ধকঃ

কবি, এখানে থামো, আর না --- বরং চলো, ফিরে চল্‌ একা একা

নিঃসঙ্গতার বক্ষে --- প্রেমের পবিত্রতা আছে

আছে ভালবাসার পরিপূর্ণ আস্বাদ

শূন্যতার চোখে না-চাওয়ার উল্লাস।


কোনদিন ভালবাসা ভিক্ষে চেয়ো না

কারো কাছে না সবুজ আকাশী ……কোনো রঙের কাছেও না

কোনো প্রেয়সীর কাছেও না!

ওরা তোমার চাওয়ার ভাষা জানবে না

জীবন বোধের অনেক অনেক দূরে --- ওরা ফেন্সিবাগানের পশ্চাতে

ঐসব ডাকবাংলোতে থাকে ওরা 

সংরক্ষিত পৃথিবীর নিভৃত বক্ষে রঙিন সোহাগে ডুবে


কবি, ওদের সমাজে তুমি মানুষ নও ফিরে এসো ফিরে এসো

নিঃসঙ্গ অরণ্যে, নিশ্চুপ ছায়ার নিচে

আজ হতে শতবর্ষ আগে শুক্লপূর্ণিমা রাতে

যে মাটিতে ‘সোফিয়া’-র কবর সজিয়ে ছিলো

যে মাটিতে ‘মনামি’-কে চিতায় তুলেছো তুমি 

সে মাটির নির্বাক প্রেমের ডাক শোন, শোন কবি…

কবি, ভালবাসা ভিক্ষে চেয়ো না 



অনুরণন


শব্দতরঙ্গগুলো প্রতিধ্বনিহীন ক্রমাগত বিস্তারে

হারিয়ে যায় দূর দূর --- বহুদূর নিসীম দিগন্তে

কোনোকাল কেউ তার পায় নি সারা!

কিছু কিছু তরঙ্গ আছে – ধ্বনি তার বার বার

ফিরে আসে আমার বোধে, আমার স্মৃতির মিনারে

আমার বিস্মৃতির অন্ধকারে বার বার জ্বেলে দেয় 

   চৈতন্যের নাক্ষত্রিক মুখ!

উত্তাল জোয়ার প্লাবনের কনসার্ট প্রতিধ্বনিময়

মস্তিষ্কে বিগত তিন দশকের আবর্তিত তরঙ্গ-সমুদ্র

আমার চোখে দেখা, কানে শোনা, বুঝে ওঠা সব!

আমি জানিনা কেমন আছি ?

শুধু জানি একটা অবিচ্ছিন্ন সময়ের রাজত্ব নিয়ে আমি আছি

আর আছে একটা স্বননিত প্রতিধ্বনি, মহাজাগতিক মজলিশ 


HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন