অনুগল্প

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন শরৎ পর্যায় অগাস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইং 

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

গুল্লি  
সদানন্দ সিংহ

গুল্লি ছিল একটা ছেলের নাম। একসঙ্গে প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র ছিলাম আমরা। গুল্লি আমাদের এক ক্লাস ওপরে পড়ত। ওর শরীরের বল যেন আমাদের কাছে হাতির মত মনে হত। হঠাৎ এসে সে আমাদের ঠেলে সরিয়ে চলে যেত। যেতে যেতে দু আঙুল দিয়ে আমাদের একটা-দুটো পাঞ্চ ছুঁড়ে দিত প্রায়সময়ই। হঠাৎ এসে আমাদের বইগুলি এলোমেলো করে চলে যেত। তাতে একবার তো আমি রেগে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ ফাঁড়াফাঁড়ির পর গুল্লি আমাকে চিৎ করে ফেলে আমার ওপর চড়ে বসেছিল। গুল্লির প্রতি সবারই রাগ ছিল। 
একদিন আমরা লক্ষ করলাম গুল্লি কয়েকদিন ধরে স্কুলে আসছে না। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল গুল্লির প্রচণ্ড জ্বর। অবশ্য সাতদিন পর ওর জ্বর কমে গেলে ও আবার স্কুলে এলো। এবার কিন্তু সে খুব চুপচাপ, কারুর সঙ্গেই সে আর ঝগড়াই করছে না।
আমার সহপাঠী প্রবীর আমার কানে কানে বললে, আমি জানি গুল্লি কেন চুপচাপ। ওর শরীরে এখন শক্তি নেই। খুব দুর্বল হয়ে গেছে জ্বরে ভুগে। এখন তুই ওকে হারাতে পারবি।
আমার চোখটা খুশিতে চক চক করে ঊঠল। বললাম, ঠিক আছে, আজ লেইজারের সময় আমি ওর সঙ্গে লড়ব।
লেইজারের ঘন্টা বাজলে আমি আর প্রবীর দৌড়ে এসে গুল্লিকে ধরে বললাম, আমার সঙ্গে লড়বি এখন?
উত্তর না দিয়ে গুল্লি চলে যাচ্ছিল। আমি ওর রাস্তা আটকে ওর গলাটাকে একহাতে প্যাঁচিয়ে একটা ল্যাং মেরে ওকে মাটিতে ফেলে দিলাম। তারপর দু’পা দিয়ে তার কোমরে এমন একটা প্যাঁচ দিলাম ও চুপচাপ পড়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর কাতর কণ্ঠে বলল, ছেড়ে দে ভাই। আমি খুব দুর্বল এখন।
আমি তবু ছাড়লাম না। ও অসহায় দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইল। বুঝলাম, বেকায়দায় পড়লে সবাই কেমন অসহায় হয়। কেউ কেউ তখন আবার মজা লোটে।
                                                                                                                                     HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন