অণুগল্প

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন গ্রীষ্ম সংখ্যা মে ২০১৭ ইং 

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

মাস্টারদার অনুগামী
অজয় বৈদ্য


অনন্তবাবু ত্রিপুরা থেকে কলকাতা গেছেন একটা বিশেষ কাজে। গড়িয়াহাটের ফুটপাথ ধরে হাঁটছেন। হঠাৎ চোখ পড়ে ফুটপাথের এক ভিখারির দিকে। একটা থালি সামনে ধরে ভিক্ষা চাইছে। কেউ কেউ দয়া করে এক-দুই টাকার কয়েন ছুড়ে দিচ্ছে থালিতে। অনন্তবাবু দয়াবশত একটা এক টাকার কয়েন ছুঁড়ে দিতে গিয়ে চোখ পড়ে ওর মুখের দিকে।
-- তুমি বিনোদ না?
-- অনন্তদা না?
-- হ্যাঁ। তোমার একি অবস্থা! আমরা তো সবাই জানতাম তুমি সেদিন পুলিশের গুলি খেয়ে মারা গেছ। সূর্যদা আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম হিলে আশ্রয় নিতে - পেছন ফিরে না তাকাতে। ব্রিটিশ পুলিশের দল আমাদের অনুসরণ করছিল।
-- আমি সব জানি। মাস্টারদার নেতৃত্বে সেদিন চট্টগ্রামের ব্রটিশ অস্ত্রাগার লুট করতে গিয়ে আমি পুলিশের গুলি খেয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় জঙ্গলে গা ঢাকা দিই। সেদিন থেকে চিরদিনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে যাই। আমাদের অপারেশন ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা কেউ ত্রিপুরা কেউ আবার কলকাতা চিরদিনের মত চলে আসি। তুমি কোথায় বাড়ি করেছ?
-- ত্রিপুরা।
-- তোমাকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে সরকার ভাতা দেয় না?
-- না। আমি চাইনি। সংগ্রাম করেছি নিঃস্বার্থ ভাবে দেশকে ভালবেসে।
-- তুমি থাক কোথায়?
-- এই ফুটপাতে।
দুই জনই উত্তেজনায় ফুঁসতে থাকে। অনেকক্ষণ কারো মুখে কোন কথা নেই।
-- আমি কাল এ সময় এখানে আবার আসব। তোমার সাথে দেখা করব।
এ কথা বলে অনন্তবাবু চলে যায়।
পরদিন অনন্তবাবু বেশকিছু টাকা নিয়ে এখানে এসে দেখে -- বিনোদ এখনো আছে, তবে জীবিত নয়, মৃত।
                                                                                                                                     HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন